ডেস্ক নিউজ:

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষ হলেও এখনো চূড়ান্ত হয়নি নতুন নেতৃত্ব। তবে নেতৃত্বের আলোচনার শীর্ষ রয়েছে ব্যবসায়ী ও নানা অভিযোগে বিতর্কিতরা। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশব্যাপী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ধারা ৫ এর (গ) উপধারায় বলা আছে- ‘বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিতে নিয়োজিত কোনো ছাত্র ও ছাত্রী ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবে না। চলতি কার্যকালের মধ্যে কারো ছাত্রজীবনে ব্যত্যয় দেখা দিলে নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারবে।’

এদিকে, গঠনতন্ত্রে স্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও শেষ মুহূর্তে শীর্ষপদের জন্য আলোচনায় আছেন ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে অভিযুক্তরা। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আদিত্য নন্দী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদ্য বিদায়ী সভাপতি বায়েজিদ আহমেদ খান ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ গ্রন্থনা ও প্রকাশনা বিষয়ক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান।

শীর্ষপদের দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আদিত্য নন্দী। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর উত্তরার ১২নম্বর সেক্টরের ১১ নং রোডে ৪৪ নং বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ‘হোয়াইট ইন্টারন্যাশনাল’ ও ‘এক্সাক্ট টেক্সটাইল সলিউশন লিমিটেড’ নামক আদিত্য নন্দীর টেক্সটাইল-কেমিক্যাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আদিত্য ও তার বন্ধু তরিকুর যৌথভাবে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় নিজস্ব এক্স করোলা প্রাইভেট কারে চলাফেরা করেন আদিত্য। গাড়িটি মাঝে মাঝে রেন্ট-এ কারে ভাড়া দেন তিনি। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ২০০৬-০৭ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ো ছাত্রথাকালীন চারুকলা অনুষদের কেয়া সঙ্গিতা বড়ুয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে তা বিয়েতে গড়ায়। কিন্তু বিয়ের এক বছরের মাথায় সঙ্গিতা তাকে প্রত্যাখান করে।
অভিযোগের বিষয়ে আদিত্য নন্দীর সাথে কথা বলতে ফোন দিলে তিনি লাইন কেটে দেন।

ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণীতে থাকাবস্থায়ই শিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তার বড়ভাই ছাত্রদলের রাজনীতি করেন। ঢাবির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের এক নেত্রীকে অবৈধ সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়া নিয়ে তুলকালাম হয়। ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের ছাত্র হলেও স্নাতোকত্তোর শেষ করতে পারেননি তিনি। পরে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়ে চার বিষয়ে ফেল করেন। তার বিরুদ্ধে রোকেয়া হলের ৭ই মার্চ ভবন থেকে ৮০লাখ, শিববাড়ি মোড়ের শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে ৭০ লাখ টাকা চাদাঁবাজির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন টেন্ডারে অবৈধ হস্তক্ষেপ করেন তিনি।

সম্প্রতি গোয়েন্দা ও ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রে জানা যায়, বায়জিদ আহমেদ খান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পর থেকেই জড়িয়ে পড়েন সংগঠন বিরোধীসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে। তার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ, শিক্ষা, সড়ক, খাদ্য ও পূর্তভবনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। বায়েজিদ তার নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বিএকে কনস্ট্রাকশন’ দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন।
জানা যায় ছাত্রনেতার চাইতে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবে বেশি পরিচিত বায়জিদ। অভিযোগ রয়েছে, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি হবার পর কোটি কোটি টাকার টেন্ডার ও চাঁদাবাজি করেন তিনি। ঢাকা শহরে সেগুনবাগিচায় তার নিজস্ব ফ্লাট রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘ দিন যাবত। সম্প্রতি এক উঠতি নায়িকাকে বিয়ে করেছেন যা একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।

বায়েজিদের ঠিকাদারি লাইসেন্স, টিন পেপার, ভ্যাট চালানের রশিদ, ব্যাংক প্রতিবেদনের কাগজপত্রসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ এ প্রতিবেদকের কাছে আছে। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গঠনতন্ত্র এবং ছাত্রলীগের বক্তব্য অনুযায়ী মেধাবী ও নিয়মিত শিক্ষার্থীরা নেতৃত্বে আসার কথা থাকলে শীর্ষ পদপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান সত বছরেও স্নাতক শেষ করতে পারেন নি। ২০১১-১২ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়ে এখন তিনি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ইনানের বিরুদ্ধে বিজয় একাত্তর হলের সভাপতি থাকাকালীন হল ক্যান্টিনে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। প্রতি মাসে তিনি ক্যান্টিন থেকে নির্ধারিতহারে চাঁদা নিতেন। এছাড়া ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্যান্টিন মালিক আনোয়ার হোসেনের থেকে এককালীন লক্ষাধিক টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া হলে কর্মচারী নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। ইনান সভাপতি থাকাকালীন বিভিন্ন সময় হল প্রাধক্ষকে তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বাধ্য করে। আর নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় প্রায় পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা করে। ছাত্রলীগের পদ পাওয়া পর থেকেই ইনান বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় জড়িয়ে পরে। বরিশাল শহরে তার রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা রয়েছে। এছাড়া ঢাকায়ও বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িত থাকার বিষয়ে জানা গেছে।

ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সহসভাপতি বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবিরের বিরুদ্ধে মুহসিন হলসহ ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারেও অভিযোগ আছে।